কাচের মেয়ে চাণক্য বাড়ৈ pdf || kacher meye pdf download

Rate this post

কাচের মেয়ে চাণক্য বাড়ৈ pdf || kacher meye pdf download

নায়িকাপ্রধান উপন্যাস ‘ কাচের মেয়ে । নারীর প্রতি বৈষম্যমূলক দৃষ্টিভঙ্গি , ধর্মের ভুল প্রয়ােগ , সামাজিক বিধি নিষেধ , ট্যাবু , যৌন হেনস্থা , অসহযােগিতা , সন্দেহ- এসব উতরিয়ে কীভাবে একটি মেয়ে সমাজে তার অবস্থান করে । নিতে চায় , তারই চিত্রভাষ্য এই উপন্যাস । উচ্চশিক্ষার জন্য পরিবারের গণ্ডি ছাড়িয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের বৈশ্বিক আঙিনায় পা রাখা একটি মেয়ে , যার পায়ে পায়ে জড়িয়ে যেতে চায় পুরুষতান্ত্রিকতার বেড়ি , কেমন হয় তার জীবনযুদ্ধ ? আর কী হতে পারে তার সম্ভাব্য পরিণতি , তা – ই চিত্রিত হয়েছে উপন্যাসের কাহিনিতে । পুরুষতন্ত্রের পাথরে নির্মিত সমাজে চলতে গিয়ে প্রতিটি পদক্ষেপে ভেঙে টুকরাে টুকরাে হয়ে যাওয়া যাদের নিয়তি , তারা কাচের মেয়ে ’ ছাড়া আর কী ? চাণক্য বাড়ৈ সমসময়ের একজন উল্লেখযােগ্য কবি । এই উপন্যাসের মধ্য দিয়ে তাঁর কথাসাহিত্যে অভিষেক ঘটল । আশা করছি , তাঁর উপন্যাস ‘ কাচের মেয়ের মাধ্যমে কথাসাহিত্যের এক অচেনাজগতের সঙ্গে পরিচিত হবেন । নতুন প্রজন্মের পাঠক ।

বইয়ের একাংশঃ আজ দুদিন হলাে এ বাসায় এসেছি । প্রথম যেমন মুখ ভার করে এসেছিলাম , আজও তেমনই রয়ে গেছে । মনে হচ্ছে , আর কখনাে আমি প্রাণখুলে হাসতে পারব না । মনের আনন্দে নেচে নেচে উড়ে বেড়াতে পারব না একটা রঙিন প্রজাপতির মতাে । এখন আমি চার দেয়ালে বন্দি । খুব সকালে বাবা খুলনার বাস ধরেছেন । মনের আকাশে বিষন্নতার মেঘ জমা হয়েছে তখনই । ধীরে ধীরে তা আরও ঘনকালাে আর ভারী হয়ে আসছে । যেন বৃষ্টি আসন্ন । আমার মন ভালাে করার জন্য প্রাণান্তকর চেষ্টা করে যাচ্ছেন ফুপু ! এটা – ওটা রান্না করছেন । আমাদের গ্রামের বিভিন্ন প্রসঙ্গ নিয়ে মজার মজার কাহিনি বলছেন । গল্পের মধ্যে হঠাৎ প্রশ্ন করে উঠছেন : -টেংরাখালী খালের সেই বাঁশের চারােটা কি আছে ? আমি মাথা নাড়াই । ফুপু নিজেই উত্তর দেন : -দেশের যে উন্নতি হইছে , তাতে তাে মনে হয় সব খালের উপরেই বিরিজ হয়ে গেছে । তাই না ? আমি আবারও মাথা নাড়াই । ফুপু বলেন : -তােদের তাে কপাল ভালাে , পথঘাট সব পাকা । আর আমরা বর্ষাকালে স্কুলেই যাতি পারি নাই । সারা রাস্তায় হাঁটু পর্যন্ত কাদা । তার ওপর মেয়ে মানুষ , চিন্তা করে দেখ , কী অবস্থা ! ফুপু কথা বলতে বলতে থালায় পায়েস ঢালেন ।

আসার সময় বাবা টিনের কলসিতে খেজুরের রস নিয়ে এসেছিলেন । ঢাকা শহরে খেজুরের রস মেলা কঠিন । তাছাড়া এসব তাে আর কিনতে হয়নি , নিজেদের গাছের । ফুপু পায়েসের থালাটা আমার হাতে এনে দেন । সাথে একটা চামচ । বলেন : -দিছিলাম ম্যাট্রিক পরীক্ষা । ফেল । দুইবার দিছিলাম । পাস করতি পারলাম না । সেই বছরই বিয়ে । ফুপু এবার মুখ টিপে হাসেন । আমার দিকে ফিরে একটু সিরিয়াস হন । -কী রে ! কিছু খাস না যে । পায়েস ভালাে হয় নাই ? ‘ আমি আবারও মাথা নাড়াই । -বললাম তাে , তােদের কপাল ভালাে । এমন সময় হইছিস , এখন আর মেয়েদের লেখাপড়া করতে কোনাে সমস্যা নাই । ভালাে রেজাল্ট করে ভার্সিটিতে ভর্তি হইছিস । তাের তাে আনন্দ হওয়ার কথা । পায়েস খা , এখন ঠান্ডা হইছে , খা । আমি গরম ধোঁয়াওঠা পায়েসে ফু দেওয়ার অভিনয় করি । ফুপুর রেকর্ড বেজেই চলে আগের মতাে : -আমাদের বাসা থেকে ভার্সিটিতে যাবি । বেশি দূর তাে না , অসুবিধা কী ? কোন মালিবাগ রামপুরা থেকে মেয়েরা জাহাঙ্গীরনগরে ক্লাস করে আসতেছে । আর এ তাে কল্যাণপুর ।

ভার্সিটির বাসে যাবি , আবার ভার্সিটির বাসে চলে আসবি । অসুবিধা কী ? ফুপুর ঘ্যানঘ্যানানি আমার কাছে অসহ্য হয়ে উঠছিল । পায়েস নয় , দৃষ্টির জিহ্বা দিয়ে বাইরের দৃশ্যাবলির স্বাদ নেওয়ার আশায় জানালায় চোখ রাখি । কিন্তু ঠান্ডা হাওয়ার কারণে এ রুমের জানালা বােধহয় খােলাই হয়নি আজ । দৃষ্টিকে ছেড়ে দিই দেয়ালের অসংখ্য হিজিবিজি লাইনের মধ্যে । পাঁচ – সাতটি এলােমেলাে রেখার সন্নিবেশে এমন এক অদেখা জন্তুর রূপ ফুটে উঠেছে , যার লম্বা দাঁত আর বেরিয়ে আসা জিহ্বা দেখলে সহসা গায়ে ঝাঁকুনি লাগে । একটা ঝাঁকি খেয়ে আমি চোখ অন্য দিকে ফেরাই । ফুপুর মুখে তখনও কথার বিরাম নেই : -সমস্যা তাে নাই ! সকালে গরম ভাত খেয়ে সালাউদ্দীনের সাথে সাথে বেরােবি । ও তােরে বাসে উঠায়ে দিয়ে অফিসে চলে যাবে । এখন মােবাইলের যুগ । কোনাে রকমের সমস্যা হলে সালাউদ্দীনরে ফোন করবি । কোনাে সমস্যা হবে না । এবার আর বসে থাকতে পারি না । পায়েসের প্লেট নামিয়ে রাখি । ফুপুকে বলি : -ফুপু , এখন রেখে দেন , বিকেলে খাব । ঠান্ডা হয়ে জমে গেলে খেতে বেশি মজা হবে । ফুপুর কাছ থেকে মুক্তি নিয়ে আমার রুমে চলে আসি । ছিটকিনি আটকে দিয়ে বিছানায় গিয়ে কম্বলটা বুক পর্যন্ত টেনে শুয়ে পড়ি । ফুপুর মুখে বারবার এবং যেকোনাে প্রসঙ্গের ভেতর এই ‘ সালাউদ্দীন ’ নামটির অনুপ্রবেশ আমার মনের মধ্যে সন্দেহের ঘূর্ণি পাকাতে থাকে ।

নতুন কোনাে সমীকরণে আমি অনিবার্য কোনাে অঙ্ক হয়ে উঠছি না তাে ? প্রথম দিন , আমরা এ বাসায় আসার পর ফুপু আমাদের খাওয়ার ব্যবস্থা করলেন । প্রয়ােজন ছিল না , তবু আমার নানা প্রকার প্রশংসা করতে লাগলেন । আমার সৌন্দর্য , মেধা , ভদ্রতা সব কিছুতেই তিনি মুগ্ধ হয়ে গেলেন খুব অল্প সময়ের মধ্যে । আর অনিবার্যভাবে চলে এল সালাউদ্দীন প্রসঙ্গ । ফুপু আমাকে ইঙ্গিত করে বললেন : -সালাউদ্দীন যেদিন শুনল তুই জাহাঙ্গীরনগরে চান্স পাইছিস , সেদিনই আমারে আলাউদ্দীনের রুমটা পরিষ্কার করে রাখতি বলল । আমি যেন হঠাৎ বিষম খেলাম । বাবা খুব প্রশান্তির সঙ্গে খেয়ে যাচ্ছেন । ভর্তিপরীক্ষা দিতে এসে সাভারে একটা সস্তা হােটেলে উঠেছিলাম আমরা , সেই প্রসঙ্গ তুলে ফুপু ব্যক্ত করে যান তাঁর জমানাে অভিমান : -সালাউদ্দীন তাে খুব রাগ করছে । কয় , ওর ভর্তিপরীক্ষার সময় মামা হােটেলে গিয়ে উঠছে । আমরা না হয় গরিব মানুষ , ছােট ফ্ল্যাট । সেই জন্যি কি দুজন মানুষের থাকার জাগা আমরা দিতি পারতাম না ? এই কথায় সঙ্গ দেন ফুপার তিনি এতক্ষণ চুপ করেই ছিলেন । অভিযােগের সুরে বললেন : -এই কাজা তুমি মােটেই ঠিক করাে নাই , জহির । আমরা থাকতে … এবার ভীষণ লজ্জা পেয়ে যান বাবা । আমি বুঝতে পারি , শীতের দিনেও তার গা দিয়ে ঘাম ছুটে আসতে চাইছে । কৈফিয়তের সুরে হাত নেড়ে নেড়ে বাবা বলতে চেষ্টা করেন : -আসলে দুলাভাই , মনের ভুলে মােবাইলডা নিয়ে পুকুরে নাইমা পড়ছিলাম । মাজায় গোঁজা ছিল ।

মােবাইলডাও নষ্ট হয়ে গেল । যত নাম্বার ছেল , তা – ও সব হারায়ে গেল । যােগাযােগ আর করতি … -আচ্ছা , শােন । যা গেছে , তা নিয়ে কথা বাড়ানির কোনাে মানে হয় না । মাইয়েডারে এখন আমার বাসায় থুয়ে যাবি । আমার বাসায় থেকে ও ভার্সিটিতে ক্লাস করবে । তাের কোনাে চিন্তা করা লাগবে না । ও তাে আমারই মেয়ে । ফ্রিজের দরজা বন্ধ করতে করতে ফুপু এই কথা বলেন । তারপর আড় চোখে ফুপার দিকে তাকান , যাতে তার সমর্থন আদায় করা যায় । আমার বয়স যত বেড়েছে , আমার পেছনে বাবার খরচও তত বেড়েছে । এটাই স্বাভাবিক । কিন্তু মফস্বলের কলেজ রেখে আমি যখন একটা বিশ্ববিদ্যালয়ের বারন্দায় পা রাখব , খরচ তখন যে আরও কয়েক গুণ বেড়ে যাবে , এটাও সত্য । যদিও , আমার মতাে আরও দুটি মেয়ের পেছনে যে ব্যয় , তা চালিয়ে নেওয়ার মতাে আয় – রােজগার এবং ইচ্ছে দুটোই আছে বাবার । তবুও আমি জানি , বাড়তি এই খরচটা নিয়েই বাবা শুরু থেকে খুব পেরেশানের মধ্যে ছিলেন । ফুপুর কথায় তিনি আশ্বস্ত হলেন । তার দুই ঠোট উপচে বেরিয়ে পড়া হাসির আভা দেখে মনে হচ্ছিল , আনন্দে শিশুদের মতাে চিৎকার দিয়ে উঠতে পারলে তিনি খুব শান্তি পেতেন । কিন্তু তিনি যে এমন একটা প্রস্তাবের অপেক্ষাতেই ছিলেন , তা বুঝতে দেওয়া মােটেও বুদ্ধিমানের কাজ হবে না মনে করে হয়তাে – বা নিজেকে সংযত করে রাখলেন । চিৎকারটা তার গলা দিয়ে বাইরে বেরােতে পারছিল না ; আর তা দেখে গলা দিয়ে ভাত নামছিল না । আমার । ভরা প্লেটে পানি ঢেলে দিয়ে তাই উঠে পড়লাম । সবাই আমার দিকে চোখ ফেরাল একসঙ্গে । আমি এমনভাবে খাওয়ার ঘর থেকে বেরিয়ে এলাম , যেন তার কিছুই আমি টের পাইনি ।

tunetuni pdf download

কাচের মেয়ে চাণক্য বাড়ৈ pdf- Download Coming soon…..

রকমারি থেকে বইটি ক্রয় করুন- Buy

কাচের মেয়ে চাণক্য বাড়ৈ pdf